ডেঙ্গু সমস্যা ও সমাধান
ডেঙ্গু সমস্যা ও সমাধান
ডেঙ্গু জ্বর:
এটি একটি সংক্রামক রোগ যা ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয় এর আরেক নাম ‘ব্রেকবোন ফিভার,।প্রধানত এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকার একটি ভাইরাসঘটিত সংক্রামক ব্যাধি এটি।এডিস নামক এক ধরণের মশার কামড়ে এ রোগ হয়।ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়।আবার, আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবানু বিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটিও ডেঙ্গু জ্বরের জীবানুবাহী মশায় পরিণত হয়।এভাবেই এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী এডিস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে।
সাধারনত মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস, বিশেষ করে গরম ও বর্ষার (বর্ষা ও বর্ষা পরবর্তী) সময় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অনেক বেশি থাকে। অপরদিকে শীতকালে সাধারণত এই জ্বর হয় না বললেই চলে।
ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের হয়ে যথা-
১.ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার ও
২.হেমোরেজিক ফিভার।
ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর এবং সেইসাথে শরীরে প্রচুর ব্যাথা হয়ে থাকে।জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে মাথায়,চোখের পেছনে,হাড়,কোমর,পিঠসহ অস্থিসন্ধ ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হয়। জ্বর হওয়ার ৪ থেকে ৫ দিন পর সারা শরীরে লালচে দানা দেখা যায়,সঙ্গে বমি বমি ভাব বা বমি,রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তবোধ করে,রুচি কমে যায় ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যেতে পারে।কিছু কিছু ক্ষেত্রে,২ বা ৩ দিন পর আবার জ্বর আসে।হেসমারেজিক ডেঙ্গু জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন ও উপসর্গের পাশাপাশি আরো কিছু সমস্যা দেখা যায় যেমন-শরীরেরে বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা,মেয়েদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব বা রক্তক্ষরণ, বুকে বা পেটে পানি আসা ইত্যাদি।আবার, লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস,কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ:
ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর (১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত) এবং সেই সঙ্গে শরীরে বিশেষ করে হাড়,কোমর,পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যাথা হয়।এ ছাড়াও মাথা ব্যথা হতে পারে। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ৪ থেকে ৫ দিনের মাথায় সারা শরীরে লালচে দানা দেখা যায়,যাকে স্কিনর্যাশ বলে। এটা অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো।এর সঙ্গে বমি বমি ভাব এমসকি বমিও হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং খাবারে রুচি কমে যায়।এই অবস্থাটা অত্যন্ত জটিল হতে পারে,যেমন-অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পরা শুরু হতে পারে,যেমন-মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সঙ্গে,রক্ত বমি,চামড়ার নিচে,নাক ও মুখ দিয়ে,পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা,চোখের মধ্যে ও চোখের বোইরে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি। মেয়েদের ক্ষেত্রে অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেক দিন পর্যন্ত রক্ত পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।এই রোগে অনেক ক্ষেত্রে বুকে বা পেটে পানি আসা,লিভার আক্তান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলউর ইত্যাদি জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করনীয় :
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের জন্য এডিস মশার বিস্তার রোধ করা এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।সাধারনত স্বচ্ছ ও পরিস্কার পানিতে এরা ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানসমূহকে পরিস্কার করতে হবে এবং পাশাপাশি মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাড়ির আশপাশের জলাশয়, ঝোপঝাড়, জঙ্গল ইত্যাদি থাকলে তা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
ঘরের বাথরুমে বা অন্য কোথাও জমানো পানি যেন ৫ দিনের বেশি না থাকে। আবার ফ্রিজ,এয়ারকন্ডিশনার বা অ্যাকুয়ারিয়ামের নিচেও যেন পানি জমে না থাকে।
যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন স্থানে ডিম পাড়ে, যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা,ডাবের খোলা,পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।
দিনের বেলায় ঘুমালে অবশ্যই মশরি টানিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাবেন।
এডিস মশা সাধারণত সকালে বা সন্ধ্যায় কামড়ায় যদিও অন্য যে কোনো সময়ও কামড়াতে পারে।তাই দিনের বেলা শরীর ভালোভাবে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে,প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করতে হবে এবং অবশ্যই ঘরের দরজা এবং জানালায় নেট লাগাতে হবে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারিরি মধ্যে রাখতে হবে, যাতে কোনো মশা তাকে কামড়াতে না পারে।
মশা নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল,ম্যাট ইত্যাদি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মশার কামড় থেকে বাচতে দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
No comments
Post a Comment